ভারতীয় সমাজ ও অধ্যাত্মজীবনে সংস্কারতত্ত্ব এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। আমাদের প্রতিটি কর্ম ও চিন্তার ক্ষেত্রেও সংস্কারের প্রভাব অপরিসীম। 'সংস্কার' শব্দের প্রায় কাছাকাছি অর্থ মনের সহজাত প্রবণতা। কাজ ও চিন্তার মাধ্যমে মানুষ নিজেই তার শুভ ও অশুভ সংস্কার গড়ে তোলে এবং এর জন্য সে নিজেই সম্পূর্ণ দায়ী। সংস্কার বা চরিত্র ভাল মন্দ যাই হোক না কেন, এটা এক দিনে গড়ে ওঠে না। দীর্ঘদিনের অভ্যাসগুলি যখন মনের ওপর একটা স্থায়ী দাগ রেখে যায়— তখনই সংস্কারে পরিণত হয়। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, প্রকৃত শিক্ষা অর্থাৎ আত্ম-বিশ্বাস, আত্মসংযম, স্বার্থশূন্যতা ও সর্বজীবে প্রেম ছাড়া শুভ সংস্কার গড়া মোটেই সম্ভব নয়। মানুষ মূলত অনন্ত জ্ঞান, শক্তি ও পবিত্রতার অধিকারী এবং এই বোধ যার ভেতর যতটুকু বাড়তে থাকবে, সে ততটা শুভ সংস্কারের অধিকারী হবে। মন ও পরিবেশ অনুকূল না হলে ভাল সংস্কার গড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন জীবনের মূল্যবোধ বোঝা। মনকে যে রঙে ছোপানো যাবে, সেই রঙেই তা তদাকার কারিত হয়ে পড়ে। দেখা যাচ্ছে যে সঙ্কল্প-বিকল্পাত্মক মনের ওপরই ভাল-মন্দ সংস্কার তৈরী করা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে। তাই শাস্ত্র বলছেন, "যাদৃশী সিদ্ধির্ভবতি তাদৃশী।” অর্থাৎ “যার যেমন ভাব তার তেমন লাভ। জগতে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের জীবন আলোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রত্যেকেই সফলতা অর্জন করেছেন অধ্যবসায়, একাগ্রতা ও কর্মতৎপরতার গুণে। এগুলি সবই শুভ সংস্কার লাভের উপায় বিশেষ ।
উপনিষদের প্রার্থনাগুলি হত সংস্কারের প্রেরণাদায়ক। তাই ঋষি বলছেন, “হে দেবগণ, আমরা বর্ণসমূহের দ্বারা যেন কল্যান বচন শ্রবণ করি, হে জনীয় দেবগণ আমরা চক্ষু সমূহের দ্বারা যেন শোভন বস্তু দর্শন করি।" আমাদের কথায়, কাজে ও চিন্তার কল্যাণময় ভাবগুলির একত্রীকরণ হওয়ার বিশেষ প্রয়োজন, তবেই তা চরিত্রগত হয়ে শুভ সংস্কারের রূপ নেবে।
তিন মনকে একটি হ্রদের সঙ্গে তুলনা করে স্বামীজী বলছেন যে, "মনের মধ্যে যে কোন তরঙ্গ উঠে, তাহা প্রকাশিত হইলেও একেবারে লুপ্ত হয় না, কিন্তু উহা চিত্তের উপর একটি দাগ রাখিয়া যায় এবং সেই তরঙ্গটির পুনরাবির্ভাবের সম্ভাবনা থাকে। এই দাগ এবং ঐ তরঙ্গের পুনরাবির্ভাবের সম্ভাবনার একত্র নাম—'সংস্কার'। আমরা যে কোন কর্ম করি—আমাদের প্রত্যেক অঙ্গ সঞ্চালন, আমাদের প্রত্যেক চিন্তা চিত্তের উপর এইরূপ সংস্কার রাখিয়া যায়; যখন সংস্কারগুলি উপরিভাগে থাকে না, তখনও এত প্রবল থাকে যে, তাহারা অবচেতন মনে অজ্ঞাতসারে কার্য করিতে থাকে। আমরা প্রতি মুহূর্তে যাহা, তাহা আমাদের মনের উপর এই সংস্কারসমষ্টির দ্বারা নিরূপিত হয়। এই মুহূর্তে আমার 'আমি' বলিতে যাহা বুঝায়, তাহা আমার অতীত জীবনের সংস্কার-সমষ্টির ফল মাত্র। ইহাকেই প্রকৃতপক্ষে 'চরিত্র' বলে, প্রত্যেক ব্যক্তির চরিত্র এই সংস্কার-সমষ্টির দ্বারা নিরূপিত হয়। যদি শুভ সংস্কারগুলি প্রবল হয় তবে চরিত্র সং হয়; অসৎ সংস্কারগুলি প্রবল হইলে চরিত্র অসৎ হয়। যদি কোন ব্যক্তি সর্বদা মন্দ কথা শোনে, মন্দ চিন্তা করে, মন্দ কাজ করে, তাহার মন মন্দ সংস্কারে পূর্ণ হইয়া যাইবে এবং ঐগুলিই অজ্ঞাতসারে তাহার কর্ম ও চিন্তাকে প্রভাবিত করিবে। বাস্তবিক পক্ষে এই সংস্কারগুলি সর্বদাই কাজ করিতেছে। সুতরাং ইহাদের ফলও মন্দ হইবে এবং ঐ ব্যক্তি একটি মন্দ লোক হইয়া দাড়াইবে—সে ঐরূপ না হইয়া পারে না। তাহার মনের এই সংস্কার-সমষ্টি মন্দ কাজ করিবার প্রবল প্রেরণা শক্তি উৎপন্ন করিবে। এই সংস্কারগুলির হাতে সে যন্ত্র তুলা হইবে, ঐগুলি তাহাকে জোর করিয়া মন্দ কাজে প্রবৃত্ত করিবে। এইরূপে যদি কেহ ভাল বিষয়ে চিন্তা করে এবং ভাল কাজ করে, সংস্কারগুলির সমষ্টি ভালই হইবে এবং অনুরূপভাবে ঐগুলি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঐ ব্যক্তিকে সৎকার্যে প্রবৃত্ত করিবে। যখন মানুষ এত বেশী সৎ চিন্তা করে যে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাহার প্রকৃতিতে সৎকার্য করিবার অদম্য ইচ্ছা জাগ্রত হয়, তখন সে কোন অন্যায় কার্য করিতে ইচ্ছা করিলেও ঐ সকল সংস্কারের সমষ্টি-স্বরূপ তাহার মন তাহাকে উহা করিতে দিবে না, সংস্কারগুলিই তাহাকে মন্দ হইতে ফিরাইয়া আনিবে ; সে তখন তাহার সৎ সংস্কারগুলি দ্বারা সম্পূর্ণরূপে প্রভাবিত হয়। তখনই সেই ব্যক্তির চরিত্র গঠিত হইয়াছে বলা যায়। "
শুভ সংস্কারের দ্বারা সমাজ ও দেশকে প্রভাবিত করতে পারলে তবেই যথার্থ লোক কল্যাণ হবে। মহামণ্ডল আয়োজিত শিক্ষণ শিবির, পাঠচক্র ও আলোচনা চক্রের উদ্দেশ্যই হোল যুব-মনে শুভ সংস্কার গড়ে তোলা।
Reformism occupies a special place in Indian society and spirituality. The influence of Sanskar is immense in our every action and thought. The word 'sanskar' almost means the instinctive tendency of the mind. Through actions and thoughts man himself develops his good and bad reforms and for this he himself is fully responsible. Whether reformation or character is good or bad, it is not developed in a day. When long-standing habits leave a permanent imprint on the mind - they become reforms. We have observed that without true education i.e. self-reliance, self-restraint, selflessness and love for all beings, good reforms are not possible at all. Man is essentially possessed of infinite knowledge, power and purity, and the more this consciousness grows in him, the more auspicious will he be. If the mind and environment are not favorable, it is not possible to make good reforms. So the foremost need is to understand the values of life. In whatever color the mind can be dyed, it becomes the cause. It is seen that the creation of good and bad reforms is completely dependent on the decision-making mind. So the scriptures say, "As is Siddhivarati, so is." That is, "As he thinks, so he gains. If we discuss the lives of the best people in different fields of work in the world, it can be seen that everyone has achieved success due to perseverance, concentration and activity. All these are special ways to get good reforms.
The prayers of the Upanishads were the impetus for reform. Hence the Rishi says, "O Gods, let us hear the auspicious words through colors, O public gods, let us see beautiful objects with our eyes." It is essential that the auspicious aspects of our words, actions and thoughts be united, only then it becomes characteristic and auspicious reformation. will take shape
Comparing the three minds to a lake, Swamiji says, "Any wave that arises in the mind, even if it manifests, does not completely disappear, but it leaves a mark on the mind and the possibility of that wave reappearing. The combination of this mark and the possibility of that wave's reappearance." Name—'Samskara'. Every action we do—every movement of our organs, every thought of ours leaves such a samskara on the mind; even when the samskaras are not on the surface, they are so strong that they work unconsciously in the subconscious mind. We are every moment. What, is determined by this samskara-samshit on our mind. What I mean by 'I' at this moment is only the result of the samskar-samshit of my past life. This is actually called 'character', the character of every person is determined by this samskar-samshit. If good samskaras predominate, character is formed; if unwholesome samskaras predominate, character is unwholesome. If a person always listens to evil, thinks evil, does evil, his mind will be filled with evil samskaras and they are unconscious. will affect his actions and thoughts. In practice these reforms have always worked. So the result will be bad and that person will be a bad person - he cannot be like that. This reformation of his mind will generate a strong motivation to do evil. In the hands of these reforms the instrument will be lifted, they will force him to do evil. Thus if one thinks about good things and does good deeds, the sum total of samskaras will be good and likewise they will induce one to do good deeds despite reluctance. When a man thinks so much righteously that, despite his reluctance, an indomitable desire to do good is awakened in his nature, then even if he wants to do any wrongdoing, his mind will not allow him to do it as a sum of all those reforms, the reforms will bring him back from evil; He was then completely impressed by his sincere reforms. Then the character of that person can be said to be formed. "
Only if the society and the country can be affected by good reforms will there be real welfare of the people. Mahamandal organizes training camps, reading sessions and discussion sessions with the aim of developing good reforms in the minds of the youth.