পর্ব - ১খ
ভারতের প্রাণ
প্রত্যেক জাতির একটি জন্মগত স্বকীয়তা থাকে এবং তদনুযায়ী ইহাকে বিশ্বের রঙ্গমঞ্চে যেন বিশেষ একটি ভূমিকা গ্রহণ করিতে হয়। এক একটি জাতি যেন স্বরগ্রামের এক একটি ধ্বনি তুলিয়া জগতে এক মনোরম সমবেত সঙ্গীত সৃষ্টি করে। ঐ নিজস্ব ধ্বনির মধ্যেই ব্যক্ত হয় প্রত্যেক জাতির প্রাণ। ইহাই উহার জাতীয় জীবনের মেরুদণ্ড, বস্তুপুর বানিয়াদ।
কোন জাতির জীবনী-শক্তি নিহিত থাকে রাজনৈতিক ক্ষমতায়—যেমন ইংরেজদের। কোন জাতির থাকে চারুকলায় বা অপর কিছুতে। আমি দেখিয়াছি সমাজ জীবনে ধর্মের সার্থকতা কতটা, গোড়াতেই না বুঝাইয়া দিলে আমেরিকানদের কাছে ধর্ম প্রচার করিতে পারিতাম না। আবার ইংলণ্ডে ধর্মপ্রচার অসম্ভব হইত, যদি না সেখানে প্রথমেই ব্যাখ্যা করিতাম বেদান্তের প্রভাবে কিরূপ বিস্মাকের রাজনৈতিক প্রগতি ঘটিতে পারে।
আমাদের এই পুণ্যভূমিতে একমাত্র ধর্মই জাতীয় জীবনের বনিয়াদ। ভারতবাসীর জীবন-সঙ্গীতে ধর্মই মূল সুর। অপর জাতিরা রাজনীতির কথা বলুক, বাণিজ্যের প্রভাবে সমৃদ্ধিলাভের মহিমা প্রচার করিয়া বৈশ্য-বৃত্তির ভূয়সী স্তুতি করুক, অথবা রাষ্ট্রের বাহ্য স্বাধীনতার গৌরব কীর্তন করুক, ভারতের জনগণ কিন্তু এইসব বুঝিতে পারে না, বুঝিতে চায়ও না। আধ্যাত্মিকতা, ধর্ম, ঈশ্বর, আত্মা, ভূমা, মোক্ষ প্রভৃতি বিষয়ের অবতারণা কর, নিশ্চয় দেখিবে ভারতের দীনতম কৃষকও এইসব বিষয়ে বিদেশী বহু তথাকথিত দার্শনিকের অপেক্ষা বেশী অভিজ্ঞ। তাই ভারতবর্ষে সমাজ-সংস্কার করিতে হইলে প্রথমেই দেখাইতে হইবে প্রস্তাবিত নূতন সামাজিক প্রথা আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে কতটা উৎকর্ষ আনিতে পারে। আবার রাজনীতি প্রচার করিতে হইলে গোড়াতেই বুঝাইয়া দিতে হইবে, রাজনীতি ভারতবাসীর একান্তকাম্য আত্মিক শক্তির বিকাশে কতটা সাহায্য করিতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে যেমন জীবনের একটা লক্ষ্য স্থির করিয়া লইতে হয়, প্রত্যেক জাতিকেও তাহাই করিতে হয়। শত শত যুগ পূর্বে ভারত এইরূপ একটি লক্ষ্য বাছিয়া লইয়াছে এবং উহাই সে আঁকড়াইয়া থাকিবে। যাহাই বল না কেন, এই লক্ষ্য নির্বাচনে ভারত ভুল করে নাই। জড়ের চিন্তা অপেক্ষা চেতনের ভাবনা, মানুষের চিন্তা অপেক্ষা ভগবানের অনুধ্যান, এমন কিছু হেয় আদর্শ নয়।
যুগ-যুগান্তরের সাধনায় ভারতবাসীর অন্তরে সঞ্চিত হইয়াছে পরলোকে দৃঢ় আস্থা, বৈষয়িক ভোগে একান্ত বিতৃষ্ণা, ত্যাগের অসাধারণ তেজ, ঈশ্বর ও অবিনাশী আত্মায় জ্বলন্ত বিশ্বাস। তোমাদের যে কেহ এইসব ত্যাগ করিতে পার কি? আমি জোর করিয়া বলিতে পারি, কেহই তাহা পারিবে না। হয়ত কয়েক মাস জড়বাদের চর্চা করিয়া নিজেদের জড়বাদী বলিয়া আমাকে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করিতে পার, কিন্তু আমি জানি তোমাদের আসল স্বরূপ কী? ধর্মতত্ত্ব বিশদভাবে বুঝাইয়া তোমাদের ডাকিলেই তোমরা পরম আস্তিক হইয়া ভারতীয় সংস্কৃতির আওতায় ফিরিয়া আসিবে। বস্তুতঃ তোমাদের স্বভাব কি তোমরা বদলাইতে পার? রাজনীতি, সমাজ-সংস্কার, সমৃদ্ধিলাভের উপায়, বাণিজ্য-নীতি প্রভৃতি বিষয়ে যত কিছুই তোমরা বল না কেন, সেই সবই দুদিনের ফাঁকা আওয়াজ, খাঁটি অন্তরের কথা নয়।
পরিণাম শুভই হউক বা অশুভই হউক, আমাদের জীবনীশক্তি নিহিত আমাদের ধর্মে। উহা আর বদলান যায় না। উহাকে বিনাশ করিয়া উহার পরিবর্তে অন্য কোন আদর্শ গ্রহণ করা সম্ভব নয়। বর্ধিষ্ণু কোন বড় গাছ এক জনি হইতে তুলিয়া স্থানান্তরিত করিলে উহাকে সহজে বাচান যায় না। ভালই হউক বা মন্দই হউক, ধর্মের আদর্শ হাজার হাজার বৎসর ধরিয়া ভারতবর্ষে চলিয়া আসিতেছে—ভারতের আকাশ-বাতাস পূর্ণ করিয়া রাখিয়াছে। শুভই বল আর অশুভই বল, আমরা এই পরিবেশের মধ্যেই জন্মিয়াছি, মানুষ হইয়াছি। এই আদর্শ আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশিয়া গিয়াছে। ইহা শিরায় শিরায় প্রতি শোণিতবিন্দুতে স্পন্দিত হইতেছে। বস্তুতঃ এই আদর্শ আমাদের প্রকৃতির সহিত এক হইয়া গিয়া আমাদের মূল জীবনী-শক্তিতে পরিণত হইয়াছে। এই জন্য এই ধর্মের আদর্শ আমরা কিছুতেই বর্জন করিতে পারি না। ইহা করিতে গেলে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হইতে হইবে।
ভাগীরথীর ঘর প্রবাহ সাগরসঙ্গম হইতে বিপরীতমুখে গঙ্গোত্রীর দিকে জোর করিয়া লইয়া গিয়া নূতন কোন খাতে চালিত করা কি সম্ভব? তাহা যদি বা সম্ভব হয়, এই দেশের পক্ষে কিন্তু ধর্ম-জীবনের স্বকীয় সনাতন ধারাটি. পরিত্যাগ করিয়া রাজনীতি বা অপর কোন নূতন আদর্শের পথে চলা একেবারেই অসম্ভব। ন্যূনতম বাধার রাস্তা ধরিয়া চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর ধর্মপথই ভারতের স্বল্পতম বাবার পথ। তাই উহাই ভারতবাসীর জীবনের পথ, অগ্রগতির পথ, কল্যাণের পথ।
যুগ যুগ ধরিয়া জাতীয় জীবন যে লক্ষ্যের দিকে প্রবাহিত হইয়াছে তাহা পরিত্যাগ করিলে জাতির মাংস অবশ্যম্ভাবী। তাই, যদি তোমরা ধর্মের পরিবর্তে রাজনীতি, সমাজনীতি বা অন্য কোন কিছুকে জাতীয় জীবনের কেন্দ্র করিয়া বস, তাহা হইলে তোমাদের পৃথিবী হইতে লোপ পাইতে হইবে। ধর্মের পথ বর্জন করিলে তোমাদের মৃত্যু অপরিহার্য। যে মুহূর্তে তোমরা জাতীয় জীবনের এই মূল প্রবাহের বাহিরে যাইবে তখনই ঘটিবে এই জ বিলুপ্তি। ধর্ম-কেবল ধর্মই ভারতের প্রাণ। উহা যদি চলিয়া যায় তাহা হইলে রাজনৈতিক প্রগতি বা সমাজ-সংস্কার সত্ত্বেও এমন কি, প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে কুবেরের ঐশ্বর্য ঢালিয়া দিলেও ভারতের মৃত্যু অবশ্যস্তারী। রাজনৈতিক বা সামাজিক উন্নতির প্রয়োজন নাই, একথা আমি বলি না; শুধু তোমাদিগকে মনে রাখিতে বলি যে এই দেশে ঐসব লক্ষ্য গৌণ-ধর্মই মুখ্য।
বর্তমান চিকিৎসা-বিজ্ঞান হইতে একটি উপমা লওয়া যাক। আমরা জানি, রোগের উৎপত্তি হয় দুইটি কারণের সমবায়ে যথা—বাহির হইতে রোগবাহী জীবাণুর আক্রমণ এবং শরীরের তৎকালীন অবস্থা। প্রাণশক্তি হ্রাস পাইয়া দেহ যখন নিস্তেজ ও দুর্বল হয় তখনই উহাতে রোগজীবাণুগুলি প্রবেশ করিয়া পুষ্ট হইতে এবং বংশবৃদ্ধি করিতে পারে। তখনই দেহ ব্যাধিগ্রস্ত হইয়া পড়ে। অন্যথা জীবাণুগুলির এমন কোন শক্তি নাই যাহাতে দেহে রোগ সঞ্চার করিতে পারে। বস্তুতঃ লক্ষ লক্ষ জীবাণু শরীরের মধ্য দিয়া সর্বদাই চলিয়া যায়, কিন্তু শরীর যতক্ষণ সতেজ থাকে ততক্ষণ উহারা কিছুই করিতে পারে না; দেহ দুর্বল হইয়া পড়িলেই জীবাণুগুলি উহাকে চাপিয়া ধরে এবং ব্যাধি সৃষ্টি করিয়া বসে। ঠিক এইভাবেই জাতীয় জীবনে ঘটে ব্যাধির সঞ্চার। জাতির দেহ যখন নির্বীর্য হইয়া পড়ে তখন রাষ্ট্র, সমাজ, শিক্ষা ও মনীষার ভিতর দিয়া নানাবিধ ব্যাধিবীজ জাতিদেহে প্রবেশ করিয়া উহাকে পীড়িত ও বিপর্যস্ত করিয়া ফেলে।
রোগ সারাইতে হইলে রোগের মূলে যে রক্তের আবিলতা আছে তাহা তারিডার করিতে হইবে। কারণ, এইরূপ করিলে রোগীর ধাতে স্বাভাবিক আত্মরক্ষার শক্তি উপচিত হইবে এবং সে তখন তাহার বহিঃশত্রু ব্যাধিবীজগুলি হটাইয়া দিতে পারিবে। আমরা দেখিয়াছি আমাদের তেজবীর্য—এমন কি, আমাদের জাতির প্রাণশক্তি রহিয়াছে ধর্মে। আধ্যাত্মিকতাই আমাদের জাতীয় জীবনের শোণিত-প্রবাহ। এই প্রবাহ যতদিন নির্মল ও ওজস্বী থাকিবে, ততদিন আমাদের কল্যাণের পথ উন্মুক্ত, ততদিন রাষ্ট্রের ও সমাজের যাবতীয় অভাবের—এমন কি, দেশের ব্যাপক দারিদ্র্যেরও প্রতিষেধক পাওয়া যাইবে।
অন্য সকল স্বার্থ বিসর্জন দিয়া এই ধর্মকে আগলাইয়া রাখিয়াছিলে বলিয়াই তোমরা শত শত শতাব্দীর ঘাতপ্রতিঘাত কাটাইয়া উঠিয়াছ। ধর্মকে বাঁচাইবার জন্য তোমাদের পূর্বপুরুষগণ বীরের মত কত বিপদ, কত দুঃখ দুর্বিপাক— এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত—বরণ করিয়াছিলেন। বৈদেশিক বিজেতা আসিয়া মন্দিরের পর মন্দির ভাঙ্গিয়া দিয়াছে; কিন্তু ঐ ধ্বংসলীলার অবসানেই আবার মন্দিরের চূড়া মাথা তুলিয়া দাঁড়াইয়াছে। গুজরাটের সোমনাথ প্রভৃতি এবং উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের এইরূপ কতকগুলি প্রাচীন মন্দির হইতে আমরা প্রচুর শিক্ষা লাভ করিতে পারি, যাহা বহু গ্রন্থপাঠেও হয় না। বস্তুতঃ এই মন্দির-সমূহ হিন্দুজাতির ইতিহাস সম্বন্ধে প্রথর অন্তর্দৃষ্টি খুলিয়া দেয়। লক্ষ্য করিয়া দেখ, এই সব মন্দিরে শত শত আক্রমণের ও শত শত পুনঃপ্রতিষ্ঠার চিহ্ন বর্তমান। বারবার বিনষ্ট হইয়াও বারবার ধ্বংসাবশেষ হইতে কিভাবে মন্দিরগুলি পুনরুজ্জীবিত হইয়া পূর্বের মত অচল মহিমায় বিরাজ করিতেছে তাহা সত্যই প্রণিধানযোগ্য। ইহার মধ্যেই ভারতবাসীর রুচির, তাহাদের প্রাণপ্রবাহের গতির সন্ধান পাওয়া যায়। ইহাকেই অনুসরণ করিয়া চলিলে জয় অবশ্যম্ভাবী।
ভারতবাসীর মন মুখ্যতঃ ধর্মপ্রবণ। তাই এদেশে ধর্মের ভাবটি পরিপুষ্ট করিতে হইবে। এই উদ্দেশ্যেই এদেশে সকল ক্ষেত্রে সর্ববিধ কর্ম নিয়ন্ত্রিত করিতে হইবে ধর্মের মাধ্যমে। স্বার্থত্যাগ ও সেবা আমাদের জাতীয় আদর্শ; এই আদর্শ অনুযায়ী ভারতের সাধনা তীব্রতর করিয়া চল, তাহা হইলেই বাকী যাহা কিছু আপনা হইতে আসিবে।
ভারতীয় জাতি বিলুপ্ত হইতে পারে না। বাস্তবিক যতদিন ভারতের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকিবে, যতদিন ভারতের জনগণ তাহাদের প্রাণস্বরূপ ধর্মকে আঁকড়াইয়া থাকিবে, ততদিন ভারতীয় জাতির বিনাশ নাই।
Part-1B
Life of India
Every nation has an innate identity and accordingly has a special role to play on the world stage. As if one nation picked up one note of the swargram and created a beautiful collective music in the world. The soul of every nation is expressed in its own sound. This is the backbone of its national life, the material base.
The life-force of a nation lies in its political power—such as the English. A nation is in art or something else. I have seen how useful religion is in social life, I would not have been able to preach religion to Americans if I had not explained it at the beginning. Again, evangelism would have been impossible in England, unless I had first explained there what strange political progress could be made under the influence of Vedanta.
Religion is the only foundation of national life in this holy land of ours. Religion is the main tune in the music of Indian life. Whether other nations talk about politics, promote the glory of prosperity due to the influence of trade and praise the virtues of Vaishya-Vritti, or sing the glory of independence outside the state, the people of India cannot understand these things, nor do they want to understand them. Discuss the topics of spirituality, religion, God, soul, land, salvation, etc., you will surely find that even the poorest farmer in India is more experienced than many foreign so-called philosophers. Therefore, if there is to be social reform in India, first of all it will be necessary to show how much the proposed new social system can bring about excellence in the spiritual field. Again, if politics is to be promoted, it has to be understood from the beginning, how much politics can help in the development of the spiritual power of the people of India. Just as every individual has to set a goal in life, every nation has to do the same. India has set such a goal centuries ago and will stick to it. Whatever you say, India has not made a mistake in choosing this target. The thought of consciousness than the thought of the body, the thought of God rather than the thought of man, is not a bad ideal.
Through the pursuit of ages, Indians have accumulated in their hearts a strong faith in the Hereafter, an abhorrence of material pleasures, an extraordinary brilliance of renunciation, a burning faith in God and the immortal soul. Can any of you give these up? I can forcefully say, no one can do it. Maybe you can practice materialism for a few months and try to deceive me by calling yourselves materialists, but I know what your true nature is? If you are called after explaining theology in detail, you will come back under the Indian culture as an absolute believer. In fact, can you change your nature? No matter what you say about politics, social reform, means of prosperity, trade policy, etc., they are all empty voices, not the words of the true heart.
Be it good or bad, our vitality lies in our religion. It cannot be changed. It is not possible to destroy it and adopt any other ideal in its place. It is not easy to save a large tree by lifting it and moving it. For better or for worse, the ideals of religion have been flowing into India for thousands of years—filling the skies and airs of India. Say good and say bad, we are born in this environment, we have become human. This ideal is mixed with our blood. It is pulsating at every sound point in the veins. In fact, this ideal has become one with our nature and has become our basic life-force. For this reason, we cannot discard the ideals of this religion. Doing so will result in severe backlash.
Is it possible to force the flow of Bhagirathi's house from Sagarsangam to Gangotri in the opposite direction and drive it to a new sector? If it is possible, for this country but its own traditional way of religious life. It is absolutely impossible to abandon politics or any other new ideology. It is wise to take the path of least obstruction. And Dharmapath is the path of India's shortest father. So this is the way of life, the way of progress, the way of welfare of the people of India.
If the goal towards which the national life has flowed for ages is abandoned, the flesh of the nation is inevitable. Therefore, if you make politics, social policy or anything else the center of national life instead of religion, you will have to disappear from the world. If you abandon the path of religion, your death is inevitable. The moment you go outside this main stream of national life, this will happen. Religion - Religion alone is the soul of India. If it goes away, India's death is inevitable, despite political progress or social reforms, even if Kubera's wealth is poured out to every Indian. I do not say that there is no need for political or social improvement; I only ask you to remember that in this country those goals are secondary-religion is paramount.
Let's take an analogy from modern medicine. As we know, the origin of disease is a combination of two factors, namely, the attack of pathogenic germs from outside and the current state of the body. When the body becomes dull and weak due to loss of vitality, pathogens can enter it, nourish and reproduce. Then the body becomes diseased. Otherwise germs have no power to infect the body. In fact, millions of germs are constantly passing through the body, but as long as the body is fresh they can do nothing; When the body becomes weak, germs attack it and cause disease. This is exactly how disease spreads in national life. When the nation's body becomes impoverished, various disease seeds enter the nation's body through the state, society, education and psyche and make it suffer and upset.
If the disease is to be cured, the blood supply which is at the root of the disease has to be removed. Because, if done in this way, the patient's natural self-defense power will increase and he will then be able to remove the disease seeds from his external enemies. We have seen our strength—that is, the life force of our nation lies in religion. Spirituality is the undercurrent of our national life. As long as this flow remains pure and vigorous, the path to our welfare is open, and so long will the antidote for all the inadequacies of the state and society—that is, even the widespread poverty of the country—be found.
By abandoning all other interests and keeping this religion, you have survived hundreds of centuries. To save religion, your forefathers bravely faced many dangers, hardships and even death. Foreign conquerors came and destroyed temple after temple; But at the end of the destruction, the top of the temple stood up again. We can learn a lot from ancient temples like Somnath in Gujarat and other such ancient temples in North and South India, which is not even in many textbooks. In fact, these temples open up valuable insights into the history of Hinduism. Notice that these temples bear the marks of hundreds of attacks and hundreds of rebuildings. It is truly remarkable how the temples have been revived from the ruins of time and time again and still exist in their former glory. In this, the taste of the people of India, the speed of their life flow can be found. If you follow this, victory is inevitable.
The Indian mind is mainly religious. Therefore, the sense of religion in this country has to be strengthened. It is for this purpose that in this country, all actions should be controlled through religion. Sacrifice and service are our national ideals; Keep intensifying the pursuit of India according to this ideal, then everything else will come from you.
Indian nation cannot disappear. In fact, as long as the spiritual vision of India continues, as long as the people of India cling to their religion as their soul, the Indian nation is not destroyed.