পর্ব- ১গ
ভারতের জীবনব্রত
বহু সহস্র বৎসরের বিপদ-আপদ, ঝড়-ঝাপটা সত্ত্বেও হিন্দু-জাতি ম নাই কেন? আমাদের রীতিনীতি যদি এতই মন্দ তবে আমরা পৃথিবী হইতে এতদিন নিশ্চিহ্ন হইয়া যাই নাই কেন? বিভিন্ন বিদেশী বিজেতা আমাদিগকে পিষিয়া মারিতে বন চেষ্টা করে নাই, তবুও কেন অপরাপর দেশের বহু অসভ্য জাতির মত হিন্দুলে অস্তিত্ব লোপ পায় নাই? ভারতবর্ষ কেন জনশূন্য হইয়া মরুভূমিতে পরিণত হয় নাই? আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকার মত এদেশেও বিদেশীরা আসিয়া স্থায়িভাবে বসবাস এবং এখানকার উর্বরা জমিতে চাষবাস করিতে লাগিয়া যায় নাই কেন? এইসব প্রশ্নের সমাধান করিতে হইলে প্রথমে হৃদয়ঙ্গম করিতে হইবে যে, ভারতবর্ষ নির্জীব নয়, উহার একটি বাস্তব স্বকীয়তা আছে। ইহাও ধারণা করিতে হইবে যে, বিশ্বসভ্যতার ভাণ্ডারে ভারতের কিছু দিবার আছে বলিয়াই এখনও এদেশ বাঁচিয়া আছে।
প্রত্যেক মানুষেরই একটি নিজস্ব ভাব আছে। বাহিরের মানুষটি যেন ঐ অন্তর্নিহিত ভাবটির বহিঃপ্রকাশ, ঐ ভাবটির পরিবাত্মক ভাষা মাত্র। ঠিক এইরূপ প্রত্যেক জাতিরও একটি স্বকীয় ভাব আছে। বিশ্বকল্যাণে নিয়োজিত এই ভাব জগতের সংরক্ষণের জন্য একান্ত প্রয়োজন। এই প্রয়োজন নিঃশেষে মিটিয়া গেলে ঐ ভাবাশ্রয়ী ব্যক্তি বা জাতি পৃথিবী হইতে লোপ পায়। এত দুঃখকষ্ট, দারিদ্র্য, ঘরে-বাহিরে নিপীড়ন সহ্য করিয়া ভারতবাসী আমরা এখনও বাঁচিয়া আছি কেন? কারণ, আমাদের বিশিষ্ট জাতীর ভাবটি জগতের পরিরক্ষণের জন্য এখনও একান্ত প্রয়োজন।
প্রত্যেক জাতির একটি বিশেষ প্রবণতা, একটি বিশেষ জীবনোদ্দেশ্য থাকে; তদনুযায়ী বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্য প্রত্যেক জাতিকেই একটি বিশেষ জীবনব্রত উদযাপন করিতে হয়। রাজনৈতিক মহত্ত্ব কিংবা সামরিক শক্তিলাভ আমাদের জাতির জীবনোদ্দেশ্য নয়—কোন কালে তাহা ছিল না আর আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে কখনও তাহা হইবে না। আমাদের জীবনরত সম্পূর্ণ অন্য ধরনের। জাতির সমগ্র আত্মিক শক্তি যেন একটি তড়িদাধারে সঞ্চিত করিয়া পরে সুযোগমত ঐ কেন্দ্রীভূত শক্তির বন্যায় সমগ্র জগৎকে পরিপ্লাবিত করা- ইহাই ভারতের জীবনব্রত।
রাজশক্তির উত্থান-পতনের এবং হস্তান্তরিত হইবার তথ্যই প্রায় সকল দেশের ইতিহাসের প্রধান উপাদান। কিন্তু ভারতে রাজা বা রাজদরবারের প্রভাব বরাবরই সীমায়িত ছিল। এই দেশের বিপুল জনসঙ্ঘ ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে জাতীয় জীবনের বিশিষ্ট ধারাটি চিরকাল নির্বিরোধে অনুসরণ করিতে পারিয়াছে। অবশ্য ভারতবাসীদের এই জীবনপ্রবাহের বেগ কখনও বাড়িয়াছে কখনও কমিয়াছে, যেমন যেমন জাতির আত্মসম্বিৎ পূর্ণজাগ্রত বা অর্থসুপ্ত হইয়া পড়িয়াছে। শত শত গৌরবোজ্জ্বল শতাব্দীর এই নিরবচ্ছিন্ন শোভাযাত্রার সমারোহ আমাকে সশ্রদ্ধ বিস্ময়ে অভিভূত করিয়া দেয়। হয়ত মাঝে মাঝে সামান্য কোন অংশের দীপ্তি কিছু স্নান দেখায়, কিন্তু পরবর্তীকালের চিত্রটি আবার অপূর্ব ভাষরতায় দেদীপ্যমান হইয়া ওঠে।
মানুষকে নবপ্রাণে সঞ্জীবিত করা পশুস্তরের মানুষকে দেবমানবে পরিণত করা—এই মহান জীবনব্রত উদ্যাপন করিতে আমাদের দেশমাতৃকা সম্রাজ্ঞীর মতই ধীর পদক্ষেপে অগ্রসর হইয়া চলিয়াছেন। স্বর্গে বা মর্তো এমন কোন শক্তি নাই যে তাহার গতি প্রতিরোধ করিতে পারে।
এই জীবনরত সত্যই অতি অপূর্ব। " ধনেন ন প্রজয়া ত্যাগেনৈকেঃমৃতত্বমানও ” কিন্তু বা সন্তানের দ্বারা নহে, ত্যাগের দ্বারাই অমৃতত্ত্ব লাভ করা যায়— ভারতের সাধনার এই মর্মবাণী সেই সুদূর উপনিষদের যুগেই ঘোষিত হইয়াছে। এই তত্ত্ব উপেক্ষা করিয়া বাসনাপূর্তি দ্বারা পার্থিব সমস্যার সমাধান করিতে জাতির পর জাতি চেষ্টার ত্রুটি করে নাই; কিন্তু কেহই সফল হয় নাই। তাহাদের মধ্যে প্রাচীন জাতিগুলি ক্ষমতা এবং ঐশ্বর্যলিলা হইতে উদ্ভূত দুর্নীতি ও দুর্গতির চাপে নিশ্চিহ্ন হইয়া গিয়াছে। আর নবীন জাতিগুলির অবস্থাও পতনোন্মুখ। তাহাদের নিকট এখনও মূল প্রশ্নগুলি অমীমাংসিত রহিয়া গিয়াছে। তাহারা জোর করিয়া বলিতে পারে না, শান্তিই, স্থায়ী হইবে, না যুদ্ধবিগ্রহ, তিতিক্ষা টিকিয়া থাকিবে, না অসহিষ্ণুতা, সততা না দৌজন্য; শারীরিক বলের জয় হইবে, না মানসিক শক্তির, ইন্দ্রিয়পরতা বাঁচিবে, না আধ্যাত্মিকতা। আমরা কিন্তু বহু যুগ পূর্বে এই সমস্যার সমাধান করিয়া লইয়াছি। সুদিন ও দুর্দিনে ঐ সমাধানটিই আঁকড়াইয়া রহিয়াছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকিব। আমাদের সমাধান— ভোগ নয়, ত্যাগ, সাংসারিকতা নয়, সাংসারিক বিষয়ে অনাসক্তি।
মানবজাতিকে আধ্যাত্মিক ভাবে প্রবুদ্ধ করাই ভারতের মূল জীবনব্রত, তাহার অস্তিত্বের পরম প্রতিষ্ঠা, চরম সার্থকতা। তাতার, তুর্কী, মোগল বা ইংরেজের শাসন সত্ত্বেও এই জীবনধারা অব্যাহত রহিয়াছে।
ভারত যে অমূল্য আধ্যাত্মিক ভাবসম্পদের উত্তরাধিকারী এবং যে রত্নরাজি সে শত শত শতাব্দীর অবনতি ও দুঃখ-দুর্বিপাকের মধ্যেও সযত্নে বুকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া আছে, তাহারই দিকে সারা পৃথিবী আজ সভ্যতার পূর্ণাঙ্গ পরিণতির জন্য চাহিয়া আছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের সঞ্চিত এই সকল অমূল্য রত্নের জন্য ভারতের বাহিরে কী ব্যাকুল প্রত্যাশা তাহা তোমরা মোটেই জান না। আমাদের পূর্বপুরুষগণ যে সঞ্জীবন-অমৃত রাখিয়া গিয়াছেন তাহার কণামাত্র লাভ করিবার জন্য ভারতের বাহিরে লক্ষ লক্ষ নরনারী কিরূপ অধীর আগ্রহে হাত পাতিয়া রহিয়াছে, তাহা লক্ষ্য কর।
-------------------------------------------------------------------
Part- 1C
LifeVow of India
Despite many thousands of years of dangers and storms, why is there no Hindu nation? If our customs are so bad, why haven't we disappeared from the earth long ago? Various foreign conquerors have not tried to destroy us, yet why Hindus have not disappeared like many barbaric nations of other countries? Why India has not become a desert? Like America, Australia and Africa, foreigners have not come to live permanently and farm the fertile land here? To solve these questions, one must first realize that India is not lifeless, it has a real identity. It should also be assumed that this country is still alive because India has something to contribute to the world civilization.
Every man has his own feeling. The outer man is just the expression of that inner feeling, the external language of that feeling. Just like this every nation has its own feeling. Dedicated to the welfare of the world, this philosophy is absolutely necessary for the preservation of the world. When this need is completely satisfied, that dependent person or race disappears from the earth. Why are we Indians still alive after enduring so much suffering, poverty, oppression at home and abroad? Because our sense of race is still absolutely necessary for the preservation of the world.
Every nation has a special tendency, a special purpose in life; Accordingly every nation has to celebrate a special life vow for the welfare of mankind. Neither political greatness nor military might is the aim of our nation—never has been and, I believe, never will be. Our lives are completely different. To gather the entire spiritual power of the nation in a stream and then to flood the whole world with the flood of that concentrated power is the life vow of India.
The rise and fall of power and the transfer of power is a staple in the history of almost all countries. But the influence of the king or royal court in India was always limited. The vast masses of this country, irrespective of rich and poor, have always been able to follow the distinctive course of national life without question. Of course, the speed of this life flow of Indians has sometimes increased and sometimes decreased, as the self-sufficiency of the nation has been fully awakened or has become dormant. The solemnity of this uninterrupted procession of hundreds of glorious centuries overwhelms me with reverent awe. Perhaps at times the luster of a small part shows some bath, but later the picture becomes resplendent with wonderful expression.
To enliven man with a new life, to turn the beastly man into a God-man—to celebrate this great life-vow, our motherland is marching slowly like an empress. There is no power in heaven or earth that can resist its motion.
This life is truly wonderful. "Dhanen na prajaya tyagenaike:mritattvamano" But not by child, but by renunciation is immortality attained — this motto of Indian Sadhana has been proclaimed as far back as the Upanishads. Nation after nation has made the mistake of trying to solve worldly problems by wish-fulfilment, ignoring this theory; but none have not succeeded. Among them the ancient nations have perished under the pressure of corruption and corruption arising from power and opulence. And the state of the new nations is also declining. To them the main questions still remain unsettled. They cannot insist that peace shall last, nor war cease. , Titiksha will survive, neither intolerance, honesty nor cruelty; physical strength will win, nor mental strength, sensuality will survive, nor spirituality. But we have solved this problem ages ago. We have stuck to that solution in good times and in bad and will stick to it till the end. Our solution — not enjoyment, not renunciation, not materialism, non-attachment to material things.
Enlightening mankind spiritually is India's main lifeblood, the ultimate foundation of its existence, its ultimate purpose. This way of life continued regardless of Tatar, Turk, Mughal or British rule.
India is the inheritor of priceless spiritual wealth and the jewel kingdom that she has carefully clutched to her bosom in spite of centuries of degradation and misery, to which the whole world is looking today for the full culmination of civilization. You have no idea of the great anticipation outside India for these priceless gems stored up by our forefathers. Observe how eagerly millions of Narnaris outside India are reaching out to obtain even a particle of the nectar of life which our forefathers have left behind.