পর্ব - ১১
ধর্মবোধ ও আধ্যাত্মিকতা
ধর্মবোধটা অবশ্য খানিকটা বুঝতে পারা যায়। ধর্মবোধ মানেই হচ্ছে কর্তব্যবোধ। ধর্মের প্রাথমিক মানে, যেটা বিশেষ প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে কর্তব্যপরায়ণতা। আমাদের ধর্ম কি ? মানুষের ধর্ম কি ? আমাদের কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন হওয়া। এবং সেই ধর্মের ওপরের স্তরের যেটা, সেটা হচ্ছে তাদের অ্যাধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গী খুলে দেওয়া। তাদের অনুভূতিকে এমন একটা স্তরে নিয়ে যাওয়া যাতে সে সেখানে সমস্ত মানুষের ঐক্য উপলব্ধি করতে পারে। এটা হচ্ছে আধ্যাত্মিক সম্পদে মানুষকে সমৃদ্ধ করা। এই দান এই সমাজ-সেবা যদি হয় সেটাই হবে শ্রেষ্ঠ সমাজ-সেবা। তাই পরের স্তরে মানুষকে ধনাত্মক চিন্তা, গঠনমূলক চিন্তা, উদ্দীপনাময়ী চিন্তা, বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে, দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। আর তার নীচে হচ্ছে প্রাণধারণের জন্যে, বেঁচে থাকার জন্যে আশু প্রয়োজন মেটাবার চেষ্টা। এটাও খুব প্রয়োজন কোন সন্দেহ নেই। কারণ একজন মানুষ না বাঁচলে সে যুক্তি, বুদ্ধি, ভাব নিয়ে কি করবে ? সে কোথায় আত্মার উন্নতি করবে ? আত্মাকে যে সে উন্নত করবে, আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গীতে যে উন্নত হবে, তা কি নিয়ে করবে সে ? সে আত্মিক বুদ্ধিটা খুলবে কোথায় ? তার তো একটা আধার চাই, একটা কিছু তো চাই যেখানে সে মানুষটা চেষ্টা করবে। সেটিই হচ্ছে মানুষের দেহ। কাজেই দেহটাকে বাঁচাতে হবে। সে জন্যই কথা আছে, 'শরীরমাদ্যং খলু ধর্মসাধনম্'। কারণ এই দেহের মধ্যে দিয়েই আমরা সব কিছু করব। দেহটা আমাদের একটা যন্ত্র। আমরা দেহসর্বস্ব নই। যে শিক্ষার মধ্য থেকে আমরা এই দৃষ্টিভঙ্গী লাভ করি, সেটাই হচ্ছে যথার্থ শিক্ষা। অর্থাৎ আমরা কি ? আমাদের কি আছে? ভাল করে জানতে হবে এবং যেটা আছে তাকে ভাল করে বিশ্লেষণ করতে হবে। তার মূল্য তার বিভিন্ন অংশের মূল্য, আমাদের ভাল করে বুঝতে হবে। কেন বুঝতে হবে ? না, যে বিভিন্ন অংশ দিয়ে আমরা তৈরী, সেগুলোর যথার্থ মূল্য ও প্রকৃতি জানলে তবে আমরা সেগুলোর সদুপযোগ, সৎ ব্যবহার করতে পারব। আমাদের যা আছে তার যদি সৎ ব্যবহার না করি তাহলে তা কাজে লাগল না, ব্যর্থ হল, বিফল হল। কাজেই আমরা কি, সেটা ভাল করে জানতে হবে।
আমরা দেখছি, প্রথমে দেহ। কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা যদি এই দেহটা জেনেই থেমে যাই, তাহলে কিন্তু আমাদের অন্য সম্পদগুলো অনাহৃত, অব্যবহৃত থেকে গেল। আমাদের দেহের ভেতরে মন আছে, বুদ্ধি আছে, তার ভেতরে আমাদের আত্মা আছে, সেগুলোর সদুপযোগ হল না, সহ্যবহার হল না। সেগুলো ব্যর্থ হল, নষ্ট হল। তা হলে আমাদের যেটা ছিল তার উপযোগিতাটা আমরা পেলাম না, নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু এই যে বুদ্ধি বা আমাদের ভাব বা চিন্তার যে জগৎটা তারও কিন্তু আধারটা হল আমাদের দেহ। আর আমাদের যে আত্মা, আমাদের যে আধ্যাত্মিক দৃষ্টির কথা বলা হচ্ছে, সেটার দরকারটা হচ্ছে শুধু আমাদের ঐক্য বোঝবার জন্যে। আমরা কেন সমাজসেবা করব ? আমরা কেন অন্য লোকের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার চেষ্টা করব ? আমরা কেন চাইব আমাদের দেশের ভাল হোক, মঙ্গল হোক ? এই জন্যেই চাইব যে আমরা আলাদা নই। এবং একমাত্র এই দৃষ্টিভঙ্গী আমাদের প্রতিযোগিতার বুদ্ধি, পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক পথ দিয়ে শুধু স্বার্থসিদ্ধি করবার যে নীতিবিগর্হিত মনোভাব, তা থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে। কাজেই যদি আমরা নীতির পথে গিয়ে ব্যক্তির এবং দেশের কল্যাণ করতে চাই, তা হলে আমাদের এই আধ্যাত্মিক দৃষ্টির একটু প্রয়োজন আছে। মানে এই নয় যে, শুধু তথাকথিত ধর্মগুলো খুব বাড়াতে হবে। অনেক মন্দির, অনেক গীর্জা, অনেক মসজিদ থাকলেই এই আধ্যাত্মিক দৃষ্টি মানুষের খুলবে না। সেগুলোর প্রয়োজন অন্য আছে। কিন্তু এই আধ্যাত্মিক দৃষ্টিটির প্রয়োজন আছে। এই আধ্যাত্মিক দৃষ্টি আমাদের ঐক্যবোধটা জাগায় । এই ঐক্যবোধ, এই সহমর্মিতা এই দৃষ্টিভঙ্গী ছাড়া আসবে না। চাপিয়ে দেওয়া সহানুভূতি বা অপরের জন্য চিন্তা বেশী কার্যকর হয় না, দীর্ঘস্থায়ীও হয় না, শেষ পর্যন্ত স্বার্থের দিকে ঝুঁকে পড়েই।
-------------------------------------------------------------------
Part - 11
Religion and spirituality
The sense of religion is somewhat understandable. Religion means sense of duty. The primary meaning of religion, which is particularly necessary, is duty. What is our religion? What is the religion of people? To be aware of our duties. And the higher level of that religion is to open up their spiritual outlook. Taking their feelings to a level where he can perceive the unity of all people there. It is to enrich people with spiritual wealth. If this donation is social service, it will be the best social service. So at the next level there is a special need to give people positive thoughts, constructive thoughts, motivating thoughts, especially among the youth. And below that is trying to meet the immediate needs for survival. It is also very necessary no doubt. Because if a person does not live, what will he do with logic, intelligence, thoughts? Where will he improve the soul? What will he do with the soul that will be improved, that will be improved in the spiritual perspective? Where will he open the spiritual intelligence? He wants a base, something where he will try. That is the human body. So the body has to be saved. That is why there is a saying, 'Sharimadyang Khalu Dharmasadhanam'. Because we will do everything through this body. The body is our instrument. We are not self-sufficient. The education from which we gain this perspective is the right education. That is, what are we? What do we have? Know well and analyze what is there. Its value is the value of its various parts, we need to understand well. Why understand? No, if we know the exact value and nature of the various parts of which we are made, then we will be able to make good and honest use of them. If we don't make good use of what we have, then it will not work, it will fail. So we must know what we are.
We see, first the body. No doubt. But if we stop knowing this body, then our other resources remain unused, unused. Our body has mind, intelligence, our soul inside it, they have not been used, they have not been tolerated. They failed, wasted. Then we did not get the benefit of what we had, it was wasted. But this intelligence or the world of our thoughts or thoughts is also the reservoir of our body. And our soul, the spiritual vision we are talking about, is only needed to understand our unity. Why do we do social service? Why should we try to remove other people's suffering? Why do we want our country to be good? That's why we want to be different. And only this perspective can save us from our competitive intelligence, the unethical tendency to pursue self-interest only through competitive means. So if we are to pursue the path of policy and benefit the individual and the country, we need a bit of this spiritual vision. It does not mean that only so-called religions should be promoted. Many temples, many churches, many mosques will not open this spiritual vision of people. They have other needs. But this spiritual vision is needed. This spiritual vision awakens our sense of unity. This sense of unity, this solidarity will not come without this perspective. Forced sympathy or concern for others is neither effective nor long-lasting, ultimately tending to self-interest.